“ধর্ম” কথাটার অর্থ হচ্ছে সত্তাগত বৈশিষ্ট্য। এটা একটা সংস্কৃত শব্দ যা বাংলা ভাষা এবং ভারতবর্ষের অন্য বিভিন্ন ভাষাতেও ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত “ধৃ” ধাতুর সঙ্গে “মন” প্রত্যয় যোগ করে ধর্ম শব্দ নিষ্পন্ন হয়; যার অর্থ হলো - যে ধারণ করে রাখে বা ধরে রাখে। এখানে ধরে রাখা বলতে বুঝানো হচ্ছে আস্তিত্বিক পরিচয়কে ধরে রাখা। জলের ধর্ম ভিজিয়ে দেওয়া বা তৃষ্ণা নিবারণ করা, আগুনের ধর্ম পুড়িয়ে ফেলা, চুম্বকের ধর্ম লোহাকে আকর্ষণ করা। যে জিনিসটা তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারে না তাকে কখনোই জল বলা যায় না ; যে পুড়িয়ে ফেলতে পারেনা তাকে কখনোই আগুন বলা যায় না আর যে জিনিসটা লোহাকে আকর্ষণ করতে পারে না তাকে চুম্বক বলা যায় না। চুম্বকের পরিচয়টাকে ধারণ করে রেখেছে তার আকর্ষণ করবার ক্ষমতা বা গুণ।; আগুনের পরিচয়টাকে ধারণ করে রেখেছে তার পুড়িয়ে ফেলবার ক্ষমতা । তাই কোন জিনিসের গুণাবলীই হচ্ছে তার ধর্ম। আমরা কোন জিনিসকে চিনি তার গুণাবলীর সঙ্গে পরিচিত হয়ে। কোন জিনিসের নামকরণ করা হয় তার গুণাবলীর উপর ভিত্তি করে। তাই কোনকিছুর নাম শুনলেই সেই জিনিসটার ধর্ম কি সে সম্বন্ধে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায়।
এখন দেখা যাক মানুষের ধর্ম কি। যে যেকোনো জীবেরই সুখ এবং দুঃখের অনুভূতি রয়েছে। এমনকি, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, উদ্ভিদের মধ্যেও সুখ এবং দুঃখের অনুভূতি রয়েছে। সুখ পেতে যাওয়া প্রতিটি জীবের ধর্ম। মানুষও সুখ পেতে চায়। মানুষ এবং অন্য জীবের মধ্যে মূল পার্থক্য এইটাই যে অন্য জীবের সুখ প্রাপ্তির চাহিদা সীমিত আর মানুষ চায় অনন্ত সুখ পেতে। মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই।
যে মানুষটা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করে সে ভাবছে আমার ১৫০০০ টাকা দরকার। যদি তার ১৫ হাজার টাকা উপার্জন হতে শুরু করে তখন সে ভাবতে শুরু করে আমার ৩০ হাজার টাকা দরকার প্রতিমাসে। এমনি করে আকাঙ্ক্ষা বাড়তেই থাকে। যদি সে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হয় তাহলেও তার আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয় না। আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি না হওয়ার কারণে সে প্রকৃতপক্ষে সুখী হতে পারে না।
যে মানুষটা একটা জেলার নেতা সে ভাবে আমি একটা রাজ্যের নেতা হব। যে একটা রাজ্যের নেতা সে ভাবে আমি একটা দেশের নেতা হব। এমনি করে আকাঙ্ক্ষার বৃদ্ধি হতেই থাকে । সে যদি সমগ্র পৃথিবীর নেতাও হয় তাহলেও তার আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হবে না। মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনন্ত। সেই অনন্ত আকাঙ্ক্ষা কোন সীমিত বস্তুর দ্বারা কখনোই তৃপ্ত হতে পারে না। একমাত্র অনন্ত সত্তার প্রাপ্তিতেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা তৃপ্ত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি মানুষ চায় অনন্ত সত্তাকে। অনন্ত সত্তাকে পেতে চাওয়াই হচ্ছে মানুষের ধর্ম।
একমাত্র ঈশ্বরই হচ্ছেন অনন্ত। প্রতিটি মানুষ জেনেবুঝে অথবা না জেনেই ঈশ্বরকেই পেতে চায়।
যে মানুষটা ঈশ্বরের অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না, অথবা যে মনে করে- ঈশ্বর আছে কি নেই সেটা নিয়ে আমার ভাববার কোন প্রয়োজন নেই, এরাও কিন্তু যে যার মতন করে আরও বড় হতে চায়, আরো বেশি পেতে চায়। সব মানুষের মধ্যেই এই ‘আরো চাই’, ‘আরো চাই’ ভাবনাটা রয়েছে। এই ভাবনাটাই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে রেখেছে । পশুর চাহিদা সীমিত, আর মানুষের চাহিদা অনন্ত। এই ভাবনাটাই প্রমাণ করে যে প্রত্যেকটা মানুষ প্রকৃত পক্ষে অনন্ত সত্তাকে পেতে চায় । অনন্ত সত্তাকে না পাওয়া পর্যন্ত মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা কখনো নিবৃত্ত হয় না ।
অনন্ত সত্তাকে পেতে চাওয়াই হচ্ছে মানুষের ধর্ম। এই পৃথিবীতে যত মানুষ আছে সব মানুষের মধ্যেই এই গুনটা রয়েছে। তাই পৃথিবীর সব মানুষের একই ধর্ম। মানুষের ধর্ম কখনো ভিন্ন নয়। এই পৃথিবীতে যত জল রয়েছে সব জলের ধর্ম এক; পৃথিবীতে যত আগুন আছে সমস্ত আগুনের ধর্ম এক; পৃথিবীতে যত অক্সিজেন রয়েছে সমস্ত অক্সিজেনের ধর্ম এক। তাই পৃথিবীতে যত মানুষ রয়েছে সব মানুষের ধর্ম এক। মানুষ কখনো ধর্ম সৃষ্টি করতে পারে না। ধর্ম প্রকৃতির দ্বারা নির্ধারিত। কোন জিনিসের কিরকম ধর্ম হবে সেটা প্রকৃতি নির্ধারণ করে। মানুষ শুধুমাত্র একটার সঙ্গে আরেকটা জিনিস মিশিয়ে একটা নতুন যৌগ পদার্থ তৈরি করতে পারে কিন্তু কোন জিনিসের ধর্মের পরিবর্তন করতে পারে না। যেহেতু সব মানুষের ধর্ম এক, তাই “সর্ব ধর্ম সমন্বয়” বা “ধর্ম নিরপেক্ষতা” কথাগুলো অর্থহীন। ধর্ম এবং ধর্মমত এই দুটো কিন্তু এক জিনিস নয়। ধর্ম প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্ট; ধর্মমতের স্রষ্টা হচ্ছে কোন না কোন মানুষ। যদিও সব মানুষের ধর্ম এক কিন্তু সব মানুষের ধর্মমত বা ধর্ম সম্পর্কিত বিশ্বাস এক নয়। ইংরেজিতে “Religion” শব্দটা “ধর্ম” কথাটার সমার্থক নয়। রিলিজন কথাটার বাংলায় অনুবাদ করলে বলা যেতে পারে “ধর্মমত”। ধর্মমত হল কতগুলো বিশ্বাস, আচার, অনুষ্ঠান এবং আচরণবিধির সমষ্টি। ধর্ম কথাটার কোন ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই। ইংরেজিতে এই শব্দটার নিকটতম অর্থব্যঞ্জক শব্দ হচ্ছে characteristics বা
একেক জন ধর্মমত প্রবর্তক তাদের অনুসরণকারীদের জন্য এক এক ধরনের আচরণবিধি, অনুষ্ঠান ও বিশ্বাস দিয়ে গেছেন। প্রবর্তক যা বলে গেছেন তার অনুসরণকারীরা অনেক সময়তেই তা সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন নাই, অথবা সময়ের পরিবর্তনের সাথে তার উপদেশাবলির মধ্যে বিকৃতি এসে গেছে অথবা অন্য কোন কারণে একমতের অনুসরণকারীদের সঙ্গে অন্যমতের অনুসরণকারীদের মতের সঙ্গে বিস্তর পার্থক্য দেখা দিয়েছে। আর এই পার্থক্যের কারণেই সংঘর্ষ হয়েছে, রক্তপাত হয়েছে এবং এখনো হয়ে চলেছে। এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ধর্ম সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করা দরকার এবং সেই সঙ্গে যুক্তিবাদী মানসিকতা দরকার। আর এই উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে ধর্ম শিক্ষার প্রয়োজন খুবই বেশি। শিশুর মনে যদি কোন বিশ্বাস সৃষ্টি করা যায় তাহলে সেই বিশ্বাস সঙ্গত বা অসঙ্গত যাই হোক না কেন বড় হয়েও তা থেকে সে সহজে মুক্ত হতে পারেনা। যুক্তিবিরোধী ও মানবতা বিরোধী কোন তত্ত্বকেই শিক্ষার অঙ্গীভূত করা উচিত না। শিশুর মনকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে সে একজন যুক্তিবাদী এবং মানবতা বাদী মানুষের পরিণত হয়। শিক্ষার মাধ্যমে কোন বিশেষ ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা বন্ধ করা দরকার।
এর আগে বলা হয়েছে,--একমাত্র অনন্ত সত্তার প্রাপ্তিতেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা তৃপ্ত হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত হওয়া কি কখনোই সম্ভব? হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব; যারা ঈশ্বরকে অনুভব করতে পেরেছেন তাদের সমস্ত আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি হয়েছে; তারা বলতে পেরেছেন- আমার আর কিছুই চাইনা; আমি তৃপ্ত; আমার সকল আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়েছে। ইতিহাসে এই ধরনের মানুষের অনেক উদাহরণ রয়েছে। এইযে সকল আকাঙ্ক্ষার পূর্তি হওয়া --একেই বলা হচ্ছে আনন্দময় অবস্থা। এই অবস্থায় পৌঁছানই হচ্ছে মানব জীবনের অন্তিম লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে প্রয়াস তাকেই বলা হয় “আধ্যাত্মিক সাধনা” বা শুধু “সাধনা”। এই পৃথিবীতে যত মানুষ ঈশ্বরকে অনুভব করেছেন তারা প্রত্যেকেই সাধনা করেছেন। কেবলমাত্র সাধনার দ্বারাই ঈশ্বরকে অনুভব করা সম্ভব; সাধনা বিনা ঈশ্বরকে অনুভব করা সম্ভব নয়।
“ধর্ম” কথাটার অর্থ হচ্ছে সত্তাগত বৈশিষ্ট্য। এটা একটা সংস্কৃত শব্দ যা বাংলা ভাষা এবং ভারতবর্ষের অন্য বিভিন্ন ভাষাতেও ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত “ধৃ” ধাতুর সঙ্গে “মন” প্রত্যয় যোগ করে ধর্ম শব্দ নিষ্পন্ন হয়; যার অর্থ হলো - যে ধারণ করে রাখে বা ধরে রাখে। এখানে ধরে রাখা বলতে বুঝানো হচ্ছে আস্তিত্বিক পরিচয়কে ধরে রাখা। জলের ধর্ম ভিজিয়ে দেওয়া বা তৃষ্ণা নিবারণ করা, আগুনের ধর্ম পুড়িয়ে ফেলা, চুম্বকের ধর্ম লোহাকে আকর্ষণ করা। যে জিনিসটা তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারে না তাকে কখনোই জল বলা যায় না ; যে পুড়িয়ে ফেলতে পারেনা তাকে কখনোই আগুন বলা যায় না আর যে জিনিসটা লোহাকে আকর্ষণ করতে পারে না তাকে চুম্বক বলা যায় না। চুম্বকের পরিচয়টাকে ধারণ করে রেখেছে তার আকর্ষণ করবার ক্ষমতা বা গুণ।; আগুনের পরিচয়টাকে ধারণ করে রেখেছে তার পুড়িয়ে ফেলবার ক্ষমতা । তাই কোন জিনিসের গুণাবলীই হচ্ছে তার ধর্ম। আমরা কোন জিনিসকে চিনি তার গুণাবলীর সঙ্গে পরিচিত হয়ে। কোন জিনিসের নামকরণ করা হয় তার গুণাবলীর উপর ভিত্তি করে। তাই কোনকিছুর নাম শুনলেই সেই জিনিসটার ধর্ম কি সে সম্বন্ধে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায়।
এখন দেখা যাক মানুষের ধর্ম কি। যে যেকোনো জীবেরই সুখ এবং দুঃখের অনুভূতি রয়েছে। এমনকি, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, উদ্ভিদের মধ্যেও সুখ এবং দুঃখের অনুভূতি রয়েছে। সুখ পেতে যাওয়া প্রতিটি জীবের ধর্ম। মানুষও সুখ পেতে চায়। মানুষ এবং অন্য জীবের মধ্যে মূল পার্থক্য এইটাই যে অন্য জীবের সুখ প্রাপ্তির চাহিদা সীমিত আর মানুষ চায় অনন্ত সুখ পেতে। মানুষের চাহিদার কোন শেষ নেই।
যে মানুষটা প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করে সে ভাবছে আমার ১৫০০০ টাকা দরকার। যদি তার ১৫ হাজার টাকা উপার্জন হতে শুরু করে তখন সে ভাবতে শুরু করে আমার ৩০ হাজার টাকা দরকার প্রতিমাসে। এমনি করে আকাঙ্ক্ষা বাড়তেই থাকে। যদি সে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি হয় তাহলেও তার আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হয় না। আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি না হওয়ার কারণে সে প্রকৃতপক্ষে সুখী হতে পারে না।
যে মানুষটা একটা জেলার নেতা সে ভাবে আমি একটা রাজ্যের নেতা হব। যে একটা রাজ্যের নেতা সে ভাবে আমি একটা দেশের নেতা হব। এমনি করে আকাঙ্ক্ষার বৃদ্ধি হতেই থাকে । সে যদি সমগ্র পৃথিবীর নেতাও হয় তাহলেও তার আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি হবে না। মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনন্ত। সেই অনন্ত আকাঙ্ক্ষা কোন সীমিত বস্তুর দ্বারা কখনোই তৃপ্ত হতে পারে না। একমাত্র অনন্ত সত্তার প্রাপ্তিতেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা তৃপ্ত হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি মানুষ চায় অনন্ত সত্তাকে। অনন্ত সত্তাকে পেতে চাওয়াই হচ্ছে মানুষের ধর্ম।
একমাত্র ঈশ্বরই হচ্ছেন অনন্ত। প্রতিটি মানুষ জেনেবুঝে অথবা না জেনেই ঈশ্বরকেই পেতে চায়।
যে মানুষটা ঈশ্বরের অস্তিত্বকেই স্বীকার করে না, অথবা যে মনে করে- ঈশ্বর আছে কি নেই সেটা নিয়ে আমার ভাববার কোন প্রয়োজন নেই, এরাও কিন্তু যে যার মতন করে আরও বড় হতে চায়, আরো বেশি পেতে চায়। সব মানুষের মধ্যেই এই ‘আরো চাই’, ‘আরো চাই’ ভাবনাটা রয়েছে। এই ভাবনাটাই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করে রেখেছে । পশুর চাহিদা সীমিত, আর মানুষের চাহিদা অনন্ত। এই ভাবনাটাই প্রমাণ করে যে প্রত্যেকটা মানুষ প্রকৃত পক্ষে অনন্ত সত্তাকে পেতে চায় । অনন্ত সত্তাকে না পাওয়া পর্যন্ত মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা কখনো নিবৃত্ত হয় না ।
অনন্ত সত্তাকে পেতে চাওয়াই হচ্ছে মানুষের ধর্ম। এই পৃথিবীতে যত মানুষ আছে সব মানুষের মধ্যেই এই গুনটা রয়েছে। তাই পৃথিবীর সব মানুষের একই ধর্ম। মানুষের ধর্ম কখনো ভিন্ন নয়। এই পৃথিবীতে যত জল রয়েছে সব জলের ধর্ম এক; পৃথিবীতে যত আগুন আছে সমস্ত আগুনের ধর্ম এক; পৃথিবীতে যত অক্সিজেন রয়েছে সমস্ত অক্সিজেনের ধর্ম এক। তাই পৃথিবীতে যত মানুষ রয়েছে সব মানুষের ধর্ম এক। মানুষ কখনো ধর্ম সৃষ্টি করতে পারে না। ধর্ম প্রকৃতির দ্বারা নির্ধারিত। কোন জিনিসের কিরকম ধর্ম হবে সেটা প্রকৃতি নির্ধারণ করে। মানুষ শুধুমাত্র একটার সঙ্গে আরেকটা জিনিস মিশিয়ে একটা নতুন যৌগ পদার্থ তৈরি করতে পারে কিন্তু কোন জিনিসের ধর্মের পরিবর্তন করতে পারে না। যেহেতু সব মানুষের ধর্ম এক, তাই “সর্ব ধর্ম সমন্বয়” বা “ধর্ম নিরপেক্ষতা” কথাগুলো অর্থহীন। ধর্ম এবং ধর্মমত এই দুটো কিন্তু এক জিনিস নয়। ধর্ম প্রকৃতির দ্বারা সৃষ্ট; ধর্মমতের স্রষ্টা হচ্ছে কোন না কোন মানুষ। যদিও সব মানুষের ধর্ম এক কিন্তু সব মানুষের ধর্মমত বা ধর্ম সম্পর্কিত বিশ্বাস এক নয়। ইংরেজিতে “Religion” শব্দটা “ধর্ম” কথাটার সমার্থক নয়। রিলিজন কথাটার বাংলায় অনুবাদ করলে বলা যেতে পারে “ধর্মমত”। ধর্মমত হল কতগুলো বিশ্বাস, আচার, অনুষ্ঠান এবং আচরণবিধির সমষ্টি। ধর্ম কথাটার কোন ইংরেজি প্রতিশব্দ নেই। ইংরেজিতে এই শব্দটার নিকটতম অর্থব্যঞ্জক শব্দ হচ্ছে characteristics বা
একেক জন ধর্মমত প্রবর্তক তাদের অনুসরণকারীদের জন্য এক এক ধরনের আচরণবিধি, অনুষ্ঠান ও বিশ্বাস দিয়ে গেছেন। প্রবর্তক যা বলে গেছেন তার অনুসরণকারীরা অনেক সময়তেই তা সঠিকভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন নাই, অথবা সময়ের পরিবর্তনের সাথে তার উপদেশাবলির মধ্যে বিকৃতি এসে গেছে অথবা অন্য কোন কারণে একমতের অনুসরণকারীদের সঙ্গে অন্যমতের অনুসরণকারীদের মতের সঙ্গে বিস্তর পার্থক্য দেখা দিয়েছে। আর এই পার্থক্যের কারণেই সংঘর্ষ হয়েছে, রক্তপাত হয়েছে এবং এখনো হয়ে চলেছে। এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ধর্ম সম্বন্ধে প্রকৃত জ্ঞান লাভ করা দরকার এবং সেই সঙ্গে যুক্তিবাদী মানসিকতা দরকার। আর এই উদ্দেশ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে ধর্ম শিক্ষার প্রয়োজন খুবই বেশি। শিশুর মনে যদি কোন বিশ্বাস সৃষ্টি করা যায় তাহলে সেই বিশ্বাস সঙ্গত বা অসঙ্গত যাই হোক না কেন বড় হয়েও তা থেকে সে সহজে মুক্ত হতে পারেনা। যুক্তিবিরোধী ও মানবতা বিরোধী কোন তত্ত্বকেই শিক্ষার অঙ্গীভূত করা উচিত না। শিশুর মনকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে সে একজন যুক্তিবাদী এবং মানবতা বাদী মানুষের পরিণত হয়। শিক্ষার মাধ্যমে কোন বিশেষ ধর্মমতের প্রতি আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টা বন্ধ করা দরকার।
এর আগে বলা হয়েছে,--একমাত্র অনন্ত সত্তার প্রাপ্তিতেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা তৃপ্ত হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণভাবে তৃপ্ত হওয়া কি কখনোই সম্ভব? হ্যাঁ, অবশ্যই সম্ভব; যারা ঈশ্বরকে অনুভব করতে পেরেছেন তাদের সমস্ত আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তি হয়েছে; তারা বলতে পেরেছেন- আমার আর কিছুই চাইনা; আমি তৃপ্ত; আমার সকল আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হয়েছে। ইতিহাসে এই ধরনের মানুষের অনেক উদাহরণ রয়েছে। এইযে সকল আকাঙ্ক্ষার পূর্তি হওয়া --একেই বলা হচ্ছে আনন্দময় অবস্থা। এই অবস্থায় পৌঁছানই হচ্ছে মানব জীবনের অন্তিম লক্ষ্য। এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে প্রয়াস তাকেই বলা হয় “আধ্যাত্মিক সাধনা” বা শুধু “সাধনা”। এই পৃথিবীতে যত মানুষ ঈশ্বরকে অনুভব করেছেন তারা প্রত্যেকেই সাধনা করেছেন। কেবলমাত্র সাধনার দ্বারাই ঈশ্বরকে অনুভব করা সম্ভব; সাধনা বিনা ঈশ্বরকে অনুভব করা সম্ভব নয়।
Designed By Brightcode Software Services Pvt Ltd.